প্রাক- ইসলামি আরবের ভৌগােলিক অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য – History Of Islam

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিক প্রথম পত্র
পাঠ-১
=======
প্রাক- ইসলামি আরবের ভৌগােলিক অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য (Geographical
Location and Geo-natural Features of Pre-Islamic Arabia) – History Of Islam In Bangla.
প্রাক- ইসলামি আরবের ভৌগােলিক অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য – History Of Islam

অরিবের নামকরণ 'আরব' শব্দটির উৎপত্তির বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে নানা মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, অহাৰ হেফজর তায়াম! দেশের ‘আরাবা' নামক স্থান থেকে আরব শব্দের উৎপত্তি। কেউ কেউ মনে করেন দক্ষিকা। বাদের আদি পুরুষ কাহতানের পত্র “ইয়ারাব'-এর নাম থেকে আরব নামের উৎপত্তি। অন্য সূত্রমতে, হিব্রু আবহুংকু।
(9) পর্ব থেকে আরব শব্দের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন আরব' শব্দের আভিধানিক অর্থ বাগ্মিতা ।।
হবেথ অধিবাসীদের বাগ্মিতা সৎপকে সকলেই সুবিদিত। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, বাগ্মী জনগণের আবাসভূমির।
নামকরণ করা হয়েছে আরব। তবে মৱময় বৈশিষ্ট্যের কারণে ঐ অঞ্চলের আরব নামকরণের পক্ষেই অধিকাংশের মত ।
অারব উপদ্বীপটি তিনাট দিক থেকে সাগর এবং একদিক শুলভাগ দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় আরববাসীরা একে "জাজিরতল
আরব’ বা আরব উপদ্বীপ বলে অভিহিত করেছে।

ভৌগােলিক অবস্থান: ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি ভুমি হলাে আরব উপদ্বীপ । আরব উপদ্বীপের অবস্থান এশিয়া মহাদেশ্বে।
দক্ষিণ-পশ্চিমে । পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এ উপদ্বীপের উত্তরে রয়েছে সিরিয়ার মরুভূমি, পূর্ব দিকে পারস্য উপসাগর ও ওমান।

উসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিমে লােহিত সাগর ।ভৌগােলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি এশিয়া, ইউরােপ ও আফ্রিকা মহাদেশের সংযােগস্থলে অবস্থিত ।
তাত্বিকদের মতে, এটি কোনাে এক সময়ে বৃহৎ সাহারা মরুভূমির একটি অংশ হিসেবে পরিগণিত হতাে। কিন্ত
কামে নীলনদ ও লােহিত সাগর দ্বারা দেশটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

বিখ্যাত আরব গবেষক ও
ঐতিহাসিক পি, কে, হিট্টি আরব উপৰ্থীপের ভৌগােলিক অবস্থানের বর্ণনায় বলেন, “ভৌগােলিক দিক দিয়ে বির
করছেন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, গােটা সিরিয়া-মেসােপটেমিয়া মরুভূমি আরবেরই অংশবিশেষ।"

আরবের আয়তন ও লােকসংখ্যা: পৃথিবীর বৃহত্তম এ উপদ্বীপের আয়তন ১০,২৭,০০০ বর্গমাইল (২৬,৫৮,৭৫১ বর্গ
কিলােমিটার)।

আল্লামা শিবলী নােমানীর মতে, আরব উপদ্বীপের দৈর্ঘ্য ১৫০০ মাইল ও প্রস্থ ৬০০ মাইল । আয়তনে
এটি ইউরােপের এক-চতুর্থাংশ এবং আমেরিকার এক-তৃতীয়াংশ। সৈয়দ আমীর আলীর মতে, ফ্রান্সের চরম উৎকর্ষের
সময় ঐ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি যতখানি ছিল এ বিশাল ভূখণ্ডের বিস্তৃতি ছিল প্রায় তার দ্বিগুণ ।

২০১০ সালের গণনানুসারে এ
অঞ্চলের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬৪ লক্ষের মতাে। (সূত্র: WWikipedia) মরুভূমি অঞ্চল বলে এখানে আয়তনের তুলনায়
ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে সমগ্র আরব উপদ্বীপ তিন ভাগে বিভক্ত। যথা: (ক) মরু অঞ্চল (Arabia Desert)
(খ) পাহাড়ি অঞ্চল (Arabia Petraca) এবং (গ) উর্বর অল (Arabia Felix)।
ক, মরু অঞ্চল; আরবের অধিকাংশ অঞ্চল মরুময় এবং অনুর্বর। পি, কে, হিট্টির মতে, এ মরু অঞ্চল সিরিয়ার মরুভূমি ও
আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি এবং গােবি মরুভূমির একটি বিচ্ছিন্ন অংশমাত্র। ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুসারে এ মরু অঞ্জনই তিনি।

ভাগে বিভক্ত। যথা: (i) আল নুফুদ, (ii) আল দাহনা ও (ii) আল হাররাহ। আরবের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত ক্ষের ও
লােহিত বালুকায় পরিপূর্ণ এলাকা 'আল নুফুদ' নামে পরিচিত। এ অঞ্চল প্রায়ই শঙ্ক থাকে, কখনও কখনও শীতকালে প্রচুর
বৃষ্টিপাত হলেও তা তৃণ-গুল্মাদিতে আচ্ছাদিত থাকে। ফলে মরুবাসী আরবগণ নিজেদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী
হওয়ায় এ অঞ্চলে বসবাস করত। নুফুদ প্রদেশ থেকে শুরু করে দক্ষিণে হাজরামাউত এবং পশ্চিমে ইয়ামেন থেকে পূর্ব
ওমান পন্তি বিস্তৃত অঞ্চল ‘আল দাহ' নামে পরিচিত।

এ অqল খুবই উষ্ণ এবং বসবাসের অনুপযােগী । তবে সাময়িক বষ্টিপাতের ফলে জমির উর্বরতা বেড়ে গেলে বেদুইনগণ এ অঞ্চলে স্বল্পকালীন বসতি গড়ে তােলেন। আরবের মধ্য ও পশ্চিমাংশে অবস্থিত অসমতল, লাভা আচ্ছাদিত অৱৰ ভূখণ্ড
ফাটলযুক্ত প্রস্তরময় আগ্নেয়গিরি অলকে ‘আল উ
হাররাহ' বলা হয়। অতিরিক্ত উষ্ণতা ও ভূমির
অনুর্বরতার জন্য এ অঞলটিও বসবাসের জন্য
উপযােগী নয়।

খ, পাহাড়ি অঞল; আরব উপদ্বীপের পশ্চিমাংশে
লােহিত সাগরের তীরবর্তী এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
উত্তরের নজদ, হেজাজ প্রদেশ, ওমান ও
হাজরামাউতে অনেক পাহাড়-পর্বত ও উচ্চ
মালভূমি পরিদৃষ্ট হয় । উপদ্বীপটি পশ্চিম দিক
থেকে পারস্য উপসাগর ও মেসােপটেমীয়
অল-রাব মল-খালি
নিম্নভূমির দিকে ঢালু হয়ে নেমে এসেছে। এর
পর্বতশ্রেণি উত্তর দিকে মিডিয়ানে ৯,০০০ ফুট
ও দক্ষিণে আল-ইয়ামেনে ১৪,০০০ ফুট উচ্চতা
স্পর্শ করেছে। ইয়ামেন প্রদেশের উচ্চ ভূখণ্ডের
এ পর্বতশ্রেণিকে জবুলুল ইয়ামেন (ইয়ামেনের
চিত্র: আরব ভূখ পাহাড়) বলে যা প্রায় আল্পস পর্বতের প্রধান শৃঙ্গ মাউন্ট ব্লাঙ্কের সমান উঁচু। লােহিত সাগর অভিমুখী পশ্চিম ঢালের পর্বতশ্রেণিটি ছােট ও খাড়া। উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশগুলাে কিছুটা নিম্নভূমি দ্বারা পরিবেষ্টিত ।

উত্তর-মধ্য মালভূমি নাজদ-
এর গড় উচ্চতা ২,৫০০ ফুট। এর পর্বতশ্রেণি শামমারা-এর লাল গ্রানাইট পাথরে সমৃদ্ধ ‘আজা' নামে একটি পর্বতশ্রেণি
আছে যার উচ্চতা ৫,৫০০ ফুট। এর উপকূল ভাগের নিম্নভূমির পেছনে তিন দিক দিয়েই বিভিন্ন উচ্চতার পর্বতশ্রেণি
রয়েছে। ওমানের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত আল-জাবাল-আল-আখদারের শীর্ষদেশের উচ্চতা ৯,৯০০ ফুট, যা ওখানকার
পূর্বমুখী ঢালের সাধারণ প্রবণতার মধ্যে এক উল্লেখযােগ্য ব্যতিক্রম। |

গ. উর্বর অঞ্চল: মরু ও পার্বত্য এলাকা ছাড়াও আরব ভূখণ্ডে উর্বর তৃণভূমি অঞল বিদ্যমান। আরবের এ তৃণভূমি অ এল কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত। যেমন- হেজাজ, ইয়ামেন, নজদ, হাজরামাউত ও ওমান । এ প্রদেশগুলাের মধ্যে আরবের মধ্যভাগে অবস্থিত হেজাজই হলাে ইসলামের কেন্দ্রভূমি। সৈয়দ আমীর আলী হেজাজের পরিচয়ে বলেন, “হেজাজ একটি বিচ্ছিন্ন দেশ, বিশেষত মক্কার চতুর্দিকের ভূখণ্ডকেই হেজাজ বলে।” মক্কা নগরী লােহিত সাগরের পূর্ব উপকূল।

থেকে ৫০ মাইল পূর্বে এবং স্ফটিক পর্বত জবলল করা থেকে ৩০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত । হেজাজের বিখ্যাত শহর
মক্কা, মদিনা ও তায়েফ শস্য-শ্যামল, ছায়া-শীতল হওয়ায় কৃষি উৎপাদন ও মনুষ্য বসবাসের উপযােগী। হেজাজের
উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলােও কৃষি উৎপাদনের উপযােগী হওয়ায় জনগণ ব্যাপকভাবে বসতি স্থাপন করেছে। ইয়ামেন, হাজরামাউত ও ওমান নিয়ে দক্ষিণ আরব গঠিত। এ প্রদেশগলােতে পাহাড়ি ও অনাবাদি অঞ্চল থাকলেও কয়েকটি উবর।

৩ বিস্তৃত উপত্যকা রয়েছে। এ উর্বর ভূ-খণ্ডগুলােতে কফি নীল, খেজুর, শাকসবজি ও বিভিন্ন ফল ও ফসলের উৎপাদন হয়ে থাকে। এর ফলে আরবের এ অঞল অত্যন্ত ঘনবসতিপর্ণ এবং কমি ও বাণিজ্যের জন্য প্রসি। ইয়ামেন শব্দের সব পুথা বা সােভাগ্যবান। এছাড়া এ অঞলগলাে কষি উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, রকমারি পণ্যদ্রব্যের শে
ধন-সম্পদের কেন্দ্রভূমি হওয়ায় প্রাচীনকালে এ অঞ্চলকে ‘সুখী আরব-ভূমি' বা আরবদের সৌভাগ্য’ (Arabia Fel/)
বলা হতাে।