খাটো জাতের নারিকেল চারা কোথায় পাবো? দেখে নিন কোথায় পাবেন

খাটো জাতের নারিকেল চারা কোথায় পাবো? উত্তরঃ- নিচে দেখে নিন কোথায় পাবেন

আজকে আপনারা জানতে পারবেন, খাটো জাতের ম্যাজিক নারিকেল চারা কোথায় পাওয়া যায় এবং এই নারিকেল চারাগাছ প্রতি দাম কেমন হবে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানী করা এ জাতের নারিকেলের চারা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি চারার দাম ৫০০ টাকা। কাছাকাছি যে কোন হর্টিকালচার সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে চারা সংগ্রহ করা যেতে পারে। হাইব্রিড জাত বিধায় এ গাছের নারিকেল দিয়ে চারা তৈরি করা যাবে না।
খাটো জাতের নারিকেল চারা কোথায় পাবো? দেখে নিন কোথায় পাবেন
খাটো জাতের নারিকেল চারা কোথায় পাবো? দেখে নিন কোথায় পাবেন

উপকূলীয় অঞ্চলে নারিকেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ইতোমধ্যে ‘বারি নারিকেল ১’ ও ‘বারি নারিকেল ২’ নামে নারিকেলের দুটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। তথাপি এ দুটি জাতের গাছ থেকে সর্ব্বোচ্চ ৭৫টির বেশি নারিকেল পাওয়া যায় না।

তাই সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রীর ব্যক্তিগত আগ্রহে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় বিদেশ থেকে এ দেশে নতুন একটি নারিকেলের জাত আমদানী করা হয়েছে যে জাতের গাছে বছরে ২৫০টি পর্যন্ত নারিকেল ধরতে পারে।

এই জাতের নারিকেল গাছ খাটো। জাতের নাম ডিজে সম্পূর্ণা হাইব্রিড। উন্নত এ জাতের নারিকেল চাষ সম্প্রসারণ করতে পারলে নারিকেলের উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ বাড়বে।

এ দেশে প্রচলিত জাতের নারকেল গাছে যেখানে নারিকেল ধরতে ৭ থেকে ৮ বছর সময় লাগে, সেখানে এই জাতের নারিকেল গাছে রোপণের ৩ বছর পর থেকেই নারিকেল ধরতে শুরু করে।

প্রচলিত জাতের চেয়ে এ জাতের নারিকেলের ফলন ৪-৫ গুণ বেশি। নারিকেলের আকারও বড়। ডাবের রঙ আকর্ষণীয় সবুজ। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে বছরে এ জাতের একটি গাছ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত নারিকেল পাওয়া সম্ভব। অত্যন্ত খাটো জাতের গাছে প্রচুর নারিকেল ধরে। হেক্টরে প্রচলিত জাতের চেয়ে বেশি সংখ্যক গাছ লাগানো যায়।

চারা রোপণ প্রক্রিয়াঃ- 

উপকূলীয় অঞ্চলের যে কোন উঁচু জমিতে এ জাতের নারিকেলের চারা লাগানো যায়। বিশেষ করে ঘেরের পাড় ও বসতবাড়ির আঙ্গিনা এ জাতের নারিকেল গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এ দুটি জায়গাতেই সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকে। যে কারণে খাটো গাছ থেকে নারিকেল চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

তাছাড়া এ দুটি স্থানের জমি উঁচু থাকে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এ জাতের নারিকেলের চারা লাগানোর উত্তম সময়। ঘেরের পাড়ে ৬ মিটার বা ২০ ফুট দূরে দূরে গর্ত করে চারা লাগানো যায়। বাড়ির আঙ্গিনায় জায়গার পরিমাণ ও অন্যান্য গাছগাছালির অবস্থা বুঝে দু চারটি গাছ লাগানো যায়।

উপযুক্ত জমি থাকলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডোয়ার্ফ নারিকেলের বাগান করা যায়। সেক্ষেত্রে সরজন বা কান্দিবেড় পদ্ধতিতে নারিকেলের বাগান করা উচিত। সেক্ষেত্রে ৩ মিটার জায়গার মাটি নালার মতো কেটে দুপাশে তুলে ৩ মিটার চওড়া বেড করে নিতে হবে। জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বেড বা কান্দি লম্বা হবে। বেডের উচ্চতা ৫০-১০০ সেন্টিমিটার হতে পারে। সবদিকে ৬ মিটার দূরত্বে সারি করে নারিকেলের চারা লাগাতে হবে।

সে হিসেবে হেক্টর প্রতি ২৭৮টি চারা লাগবে। কান্দি পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতিটি বেড বা কান্দিও ঠিক মাঝখানে সারি করে ৬ মিটার দূরে দূরে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাপ হবে সবদিকে ১ মিটার বা ৩ ফুট। গর্ত তৈরির পর প্রতি গর্তের মাটিতে ১৫-২০ কেজি পচা গোবর সার বা কম্পোষ্ট সার মিশিয়ে দিতে হবে।

মাটিতে থাকা পোকা বিশেষ করে উঁই পোকার হাত থেকে চারার গোড়াকে রক্ষার জন্য গর্ত প্রতি ৫০ গ্রাম দানাদার কীটনাশক (বাসুডিন/ফুরাডান/পাদান) প্রয়োগ করা যেতে পারে। চারা রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হকে যেন গোড়ার নারিকেলটি সম্পূর্ণ মাটির নিচে যায় ও গর্তের মাঝখানে চারাটি খাড়াভাবে থাকে।

গোড়ার মাটি ভালভাবে হাত দিয়ে চেপে শক্ত করে দিতে হবে। গর্ত মাটি দিয়ে পুরোপুরি ভরাট না করে কিছুটা খালি রেখে দিলে ভাল হয়। এতে নারিকেল গাছ বড় হলে তার গোড়ার শিকড়ের বলটি মাটির উপরের তলের নিচে থাকে। এতে ঝড়ে গাছ সহজে উপড়ে পড়ে না।

চারা লাগিয়ে গোড়ায় পানি দিতে হবে। লাগানো চারা গবাদিপশুর হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। কান্দিবেড় বা সরজন পদ্ধতিতে নারিকেলের বাগান করলে নালার পানিতে মাছ ও হাঁস পালন করে বাড়তি আয় করা যায়। নারিকেল গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত বেডে নানা রকম মৌসুমী শাক সবজি চাষ করা যায়।


লেখাঃ মৃত্যুঞ্জয় রায়
উপ প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।